Sunday 16 September, 2012

দৃষ্টি



বরকত সাহেব মাঝে মাঝে বসে চিন্তা করেন, যদি সবকিছু তার কল্পনার জগত এর মতো হোতো , কত ই না ভাল হোতো । বাস্তব আর ভাবনার জগত এর মধ্যে কি বিস্তর ফারাক। ইশ...... তার কল্পনার জগত এ সেই রাজা। আর তার বড় শত্রু তার স্ত্রী। বাস্তব ও মোটামুটি এক ই রকম, শুধু উনি এখানে একজন হতভাগ্য আদমি। তার রাজ্যের সব কলকাঠি তার স্ত্রীর হাতে। বাস্তব রাজ্যে তাকে প্রায়ই তার স্ত্রীর ঝাটা পেটার সম্মুক্ষিন হতে হয়। শুধু ভাগ্যের বেপার তার স্ত্রী ঝাঁটা পেটা করার সময় দরজা বন্ধ রাখেন। তা না হলে ...।।বরকত সাহেব আর মানব সমাজ এ মুখ দেখাতে
পারতেন না। বরকত সাহেব এর ছেলে গুলো ইতিমধ্যে উচ্ছন্নে চলে গেছে কিছুটা।। পুরোটা যেতে ও বেশি দেরি নাই। বরকত সাহেব এর ধারনা , কয়েক বছর এর মধ্যে এলাকার ছেলে ছোকরা রা তাকে  তার গুনধর ছেলে দের নামে চিনবে। লিটু’র বাবা , পলটুর বাবা। মাঝে মাঝে বরকত সাহেব দেখেন তার ছেলেরা মোটর সাইকেল এ সানগ্লাস পরে ঘুরছে।। সাথের ছেলে পেলেদের দেখলে ভদ্র ঘরের ছেলে বলে মনে হয় না। কি আর করা।
তার ছেলেরা তাকে দেখলে মুখ নিচু করে হাসে বলেই ধারনা তার। হাসবেনা ই বা কেন? বাপ , মা এর হাতে ঝাঁটা পেটা খায়। শুধু মেয়ে টা তার কথা শুনে। তাকে চা করে দেয়।। মাঝে মাঝে পাশে বসে চুল বেছে দেয়। মাথায় অনেক পাকা চুল। মেয়ে টা প্রায় ই বলে বাবা চুলে কলপ দাও। বরকত সাহেব বলেন, ‘ মা রে, মনটাই এখন ফেঁকাসে হয়ে গেছে , চুল কালো করে কি করবো। তুই ই বেছে দে কয়েকটা।“
মেয়ে টার নাম লুবনা। চোখ দুইটা এতো মায়াময়...।  মাঝে মাঝে বরকত সাহেব ভাবেন , আল্লাহ , তাকে হয় তো অনেক কিছুই দেন নাই... কিন্তু এই মেয়ে দিয়ে তার সব অভাব পুরন করে দিয়েছেন। ভাবতে ভাবতে ই বরকত সাহেব এর চোখে পানি চলে আসে। বরকত সাহেব আর পানি লুকান না... তার তো আর লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই......... সম্মান থাকলে ই সম্মান হারানর ভয় থাকতো।
বরকত সাহেব এর স্ত্রীর  নাম , জোমেলা খাতুন। বরকত সাহেব  মনে মনে তাকে ঝামেলা খাতুন  বলে ই ডাকে। একদিন মুখ  ফসকে মনের কথা বের হয়ে  গিয়েছিল। এজন্য ও তাকে ঝামেলায় পরতে হয়েছে। অবশ্য , ওই দিন অল্পের উপর পার পেয়ে গিয়েছেন।  ছেলেরা মায়ের জন্য বাজার থেকে বিশাল এক ইলিশ মাছ নিয়ে এসে ছিল। তাই, বরকত সাহেবকে একটু সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। নাহলে...।উফফফ...।ভাবতে ই বরকত সাহেব এর তলপেটে কেমন যেন মোচড় দেয়। মেয়েটা বুঝতে পারে সব ই।মেয়েটা বরকত সাহেব এর দিকে করুন চোখে তাকায়। কষ্টে বরকত সাহেব এর কান্না চলে আসে। মেয়ে টা এসে বলে , ‘ বাবা, চল কার্টুন দেখি , টম এন্ড জেরি। “
বরকত সাহেব এর ইচ্ছা  করে না, তাও মেয়ে টার সাথে বসে দেখে। চোখ টিভি তে , মন অন্য কোথাও। অন্য জগত  এ। বরকত সাহেব এর কল্পনার  জগত।
“এই ঝামেলা , এই দিকে আয়...।  জমেলা বরকত সাহেব এর কাছে আসে। বরকত সাহেব ঠাটিয়ে থাপ্পর দেন। জমেলার ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে যায়। বরকত সাহেব  মনে মনে খুশি হন। গালি দেন, কুত্তার বাচ্চা। জমেলা  ভীত চোখে তাকায়। বরকত সাহেব  বলেন... এই হারামজাদি।। দে ,পা টিপে দে... জমেলা ভীত সন্ত্রস্ত।। আস্তে আস্তে পা টিপে দেয়...বরকত সাহেব যার পর নাই আনন্দিত। হটাত পা এর লোমে চাপ পরায় বরকত সাহেব কল্পনার জগতএ ই বেথা পেলেন... বরকত সাহেব , চোখ মুখ কুঁচকে , দিলেন এক লাত্থি...। গালি দিয়ে উঠলেন।।হারাম জাদি...।।
গালি টা মনে হয় জোরে হয়ে  গেছে...... লুবনা বলে উঠল...বাবা; কি বলও তুমি? আম্মা শুনলে  বকা দিবে।বরকত সাহেব  হকচকিএ উঠলেন। চশমার ফাঁক দিয়ে আসে পাশে তাকালেন। না । ওই মহিলা নেই। লুবনা করুণ চোখে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।
এখন কল্পনার জগত মাঝে মাঝে ই বাস্তব এর মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে খুব  ই বিপদ এ পরতে হয় বরকত সাহেব  কে। বাধ্য হয়ে বরকত সাহেব  এখন দিনের বেশির ভাগ  সময় বাহির এ থাকার চেষ্টা করেন। অফিস ছুটির পর ও  রিকশা নিয়ে কিছুক্ষন ঘুরেন। মাঝে মাঝে ফুটপাথ এ হাঁটেন।  ফুটপাথ এর মানুষ এর জীবন ও  তারকাছে বেশ ভাল লাগে।  ঝুপড়ীর মধ্যে গাদাগাদি করে  থাকে, তাও তাদের মধ্যে  কত মিল।বরকত সাহেব এর মনে  হয়, এই ফুটপাথ এর জীবন তার  জীবন এর চাইতে আনন্দের। দুই  এক দিন আবার কোন পার্ক  এ গিয়েছিলেন। কিন্তু পার্ক  এর পরিবেশ তার কাছে ভাল  লাগে না। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়ে কি আপত্তিকর অবস্থায়  বসে থাকে, বরকত সাহেব এর লজ্জা লাগে। তার ধারনা  লিটু পলটু ও হয় তো এরকম করে কোথাও বসে থাকে। কে জানে? অজান্তে ই বরকত সাহেব এর হতাশ লাগে।
ছুটির দিন গুলো বরকত সাহেব  এর কাছে অভিশাপ এর মতন। সারাদিন  বাসায় থাকা লাগে। সারাদিন  ই ভয়ে ভয়ে থাকা লাগে।বরকত  সাহেব সবসময় লুবনার আসে  পাশে থাকার চেষ্টা করেন।  মনে হয় মা এর আশ্রয়। মেয়ে টা তার সব ক্ষমতা দিয়ে বাবা কে মা এর হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।.....বরকত সাহেব এর মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে লুবনা কে নিয়ে কোন এক ছুটির দিন এ কোথাও ঘুরে আসতে। ছেলে মেয়ে দের নিয়ে তার সুখের স্মৃতি নেই বললে ই চলে......।  খুব ই ইচ্ছা করে বাসার সবাই কে নিয়ে যদি কমপক্ষে ১ ঘণ্টা সময় ও আনন্দে কাটানো যেতো............।। বরকত সাহেব এর জন্য এটা অনেক দুরের ভাবনা......... কয় দিন পর হয়ত লিটু পলটু তাকে বাবা বলেই ডাকবে না.......অথচ এই দুই পুত্রের জন্য তাকে কতো যে কষ্ট করতে হয়েছে। মেয়েটার জন্য তুলনামুলক ভাবে কিছুই করেন নি......

আজ বরকত সাহেব বাসায়  একটু তাড়াতাড়ি আসলেন। মেয়েটাকে নিয়ে মার্কেট এ যাবেন। মেয়েকে একটা সারপ্রাইজ দিবেন। একদিন লুবনা ,  বাবাকে একটা মোবাইল এর কথা বলেছিল। বরকত সাহেব আজ হাতে কিছু টাকা পেয়ছেন। মেয়ে টা নিশ্চয়ই এতো দিন এ মোবাইল এর কথা ভুলে গেছে......।। কিন্তু বরকত সাহেব ভুলেন নাই। মেয়ে কে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বরকত সাহেব তার চশমা টা ভেঙ্গে ফেললেন। চশমা কিনার বাহানায় মেয়ে কে মার্কেটে নিয়ে যাবেন বরকত সাহেব। ঘরে ঢুকে বরকত সাহেব লুবনা কে ডাক দিলেন। -“ মা রে, আমাকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা পানি দে, যেই রোদ পড়েছে।“
লুবনা বাবা কে পানি এনে দিলো। ‘মা , আমি তো একটা ঝামেলায় পরেছি। আমাকে একটু সাহায্য কর।
লুবনা একটু বিচলিত , “ কি হয়েছে বাবা?” বরকত সাহেব  বললেন,” আজকে বাস থেকে নামার  সময় চশমা টা পরে গেছে , ২  টা গ্লাসই ভেঙ্গে গেছে। কিনতে  হবে। তুই কি আমার সাথে যাবি মার্কেটে? “
মেয়ে টা যাবে। বরকত সাহেব  খুবই আনন্দিত।
রিকশায় উঠে বরকত সাহেব  লুবনা কে পকেট থেকে ১২০০০  টাকা বের করে দিয়ে বললেন , মা রে।। টাকা তোর হ্যান্ড  ব্যাগ এ রাখ। আমার পকেট এ রাখতে ঝামেলা হচ্ছে।“ লুবনা টাকা টা ব্যাগের মধ্যে রাখল। রিকশা যাচ্ছে ওয়ারলেস রোড এর দিকে। চশমার একটা বড় মার্কেট আছে সেখানে।
একটা চশমার দোকানে ঢুকেই লুবনা বাবা কে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট শুরু করে দিলো। কোন ফ্রেমে কেমন লাগে। কিন্তু কোনোটাই পছন্দ করতে পারছে না। বরকত সাহেব খুবই মজা পাচ্ছেন মেয়েটার আগ্রহ দেখে। অবশেষে মেয়ে একটা চশমা পছন্দ করল বাবার জন্য। রিম লেস চশমা। খুবই হাল্কা। চোখে দিলে টের পাওয়া যায় না। মেয়ের পছন্দে চশমা কিনে বরকত সাহেব খুবই আনন্দিত। তিনি মেয়ে কে বললেন , চল মা,  বাপ-বেটি মিলে কোথাও খাওয়া দাওয়া করি। লুবনা বলল, চল বাবা বসুন্ধরা সিটিতে যাই। ফুড কোর্টে বসে খাব। বরকত সাহেব এর কাছে মনে হচ্ছে মেয়ে টা কোনও জান্নাতের নাম বলছে। এই দিন টা অবশ্যই বরকত সাহেব এর জীবন এর সেরা দিন। বরকত সাহেব বললেন, মা তুই যেখানে খেতে চাইবি সেখানেই খাবো। লুবনা আবার বললও , না বাবা, চলও কোনও কাবাব হাউজ এ খাওয়া দাওয়া করি। বরকত সাহেব বললেন, আচ্ছা চল।
রিকশা নিতে যাওয়ার সময়, লুবনা  আবারো বললও, না , বাবা...।বসুন্ধরা  সিটিতেই চলো। বরকত সাহেব  রিকশা নিলেন। বরকত সাহেব  চশমা চোখে দিয়ে রিকশায় বসলেন। মেয়েটা বাবার হাত ধরে  রেখেছে।
রিকশা , দৈনিক বাংলা পার  হয়ে কাঁঠাল বাগান দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাত একটা মোটর সাইকেল সামনে এসে থামল। দুই যুবক ওটাতে বসা। দুজন এরই মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা। শুধু চোখ খোলা। দুই যুবক সামনে এসেই বললও, “এই টাকা বের করেন।“ এই মেয়ে ব্যাগ দাও , “ লুবনা ভয়ে বাবার হাত চেপে ধরেছে। বরকত সাহেব তার জীবনে আর কখনো এরকম পরিস্থিতিতে পরেননি। বুঝতে পারছেন না কি করবেন । তবে সাথে মেয়ে আছে।অবচেতন মন বলছে , বরকত কোনও ঝামেলা করা যাবে না। কিন্তু , মেয়ে কে মোবাইল কিনে দিতে হবে। বরকত সাহেব এর মনটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। কেন তাকেই এতো কষ্ট পেতে হয়। বরকত সাহেব মানি ব্যাগ বের করে দিলেন। কিন্তু তার  ব্যাগে ৬৩২ টাকা আছে মাত্র। দুই যুবক টাকা নিয়ে নিল। মানি ব্যাগ ফেরত দিলো। বরকত সাহেব এর মনে একটা ক্ষীণ আশা জন্মাল যে তারা হয়তো মেয়েটার ব্যাগ নিবে না। দুই যুবক, ফিরে যাচ্ছিলো। কিন্তু আবার ফিরে তাকালও। বরকত সাহেব এর সাথে চোখাচোখি হল। তার বুকটা ধুপ করে উঠল। হার্ট বীট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দুই যুবক মেয়েটার ব্যাগ টা নিয়ে গেলো। মেয়েটা কেঁদে দিলো। বরকত সাহেব এর চোখের কোনেও পানি জমেছে। আবার সেই পানি বাষ্প হয়ে মিলিয়ে গেলো। , সমস্ত চেতনা লোপ পেয়েছে। “এই রিকশা, মালিবাগ চলো।“
রিকশা ফিরে যাচ্ছে, মেয়েটা এখনও ভয়ে বরকত সাহেব এর হাত চেপে রেখেছে। আর বরকত সাহেব , অনেক দূরে তাকিয়ে আছেন।

 লুবনা এবং বরকত সাহেব  বাকিটা পথ নিরাপদেই আসলো। বাকিটা রাস্তা কেউ কোনও কথা বলল না। লুবনার কান্নাও থেমে গেছে, শুধু বরকত সাহেব বিহবল হয়ে আছেন। মেয়েটা খুব স্বাভাবিক আচরন করছে। কিন্তু বরকত সাহেব কিছুক্ষন পর পর হারিয়ে যাচ্ছেন তার নিজের জগতে। ‘ এই ব্যাগ দে, ফেরত দে। বেয়াদবের বাচ্চা, বাপ মা ভদ্রতা শেখায় নাই।“ কল্পনার জগতে, ২ যুবক এর একজন বললও , “না , ভদ্রতা শেখায় নাই। আমার বাবা, আমার মায়ের হাতে ঝাঁটা পেটা খায়। আর আমাকে কিছু বললে খবর আছে না। এক্কেরে ঘচাং কইরা দিমু “ কল্পনার জগতেই বরকত সাহেব ধাক্কা খেলেন। লজ্জা পেলেন। কিন্তু বাস্তবে তার চোখ ভিজে গেলো। কল্পনায় আবার একবার যুবকটার সাথে চোখাচোখি হল।
বরকত এর কল্পনার জগতও আস্তে  আস্তে তার নিয়ন্ত্রণ  এর বাহিরে চলে যাচ্ছে।  অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। তার কল্পনার এই জগতটা  ছাড়া তার আর কিছুই নাই...।। এটাও যদি তার কাছে দুঃসহও হয়ে যায়, তার বেচে থাকার আর কোনও অবলম্বন থাকবে না।  নিজের এই জগতে তাকে বাঁচতে হবে নিজের মতো করে। এখানে সবাইকে তার কথা শুনতে হবে। এখানে সেই রাজা।
কিন্তু, ওই চোখাচোখির মুহূর্তটা বার বার মনে পড়ছে। দুর্বল, কিন্তু লজ্জার একটা দৃষ্টি। কতো চেনা এক দৃষ্টি। কতদিন এর চেনা। মানুষ কি মুখোশ পরে সব কিছু ঢেকে ফেলতে পারে? মনে হয় না।
বরকত সাহেব , এখন আর অফিস যান না। অনেক ছুটি জমে আছে, উনি একটা লম্বা ছুটি নিলেন। এই ছুটিতে তাকে কিছু কাজ করতে হবে। তার কল্পনার জগতটাকে বাচানর জন্য। বরকত সাহেব বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন কিছু দিনের জন্য। দূরে কোথাও নয়। তারই আসে পাশের পরিচিত কোথাও। হয়তো কমলাপুর রেল স্টেশন এ, হয় তো কোনও এক মসজিদে। নতুবা অন্য কোথাও। সবার আসে পাশে থাকবেন কিন্তু কেউ যেন খুজে না পায়। কাউকে বলে যাবেন না। লুবনা কেও না।


বরকত সাহেব বাসা ছেড়েছেন  ২ দিন হল।সাথে ২টা লুঙ্গি, ১ টা গামছা , আর ২ টা পাঞ্জাবী।  আর ছোটও একটা ব্যাগ। ব্যাগ  এ কাপর গুলো আর ২ হাজার  টাকা। তবে উনি কোনও রেল  স্টেশন অথবা মসজিদ এ যান  নাই। ফুট পাথ এ সারাদিন  হাঁটাহাঁটি করেন আর রাত হলে ,রামপুরা টিভি সেন্টার  এর পাশে সুয়ারেজ এর কাজ  এর জন্য কিছু মোটা আন্ডার গ্রাউনড  পাইপ আনা হয়েছে, অগুলার একটা তে থাকেন। ব্যাগ মাথার তলে রেখে ঘুমান। রাতের অর্ধেক টা জেগেই থাকেন আর নিজে নিজে বিড়বিড় করেন। ভোর হলেই সুয়ারেজ লাইন এর কাজ শুরু হয়, আর উনি চলে যান হাঁটাহাঁটির জন্য। হয়তো ক্লান্ত লাগলে , কোনও বিল্ডিং এর পাশে বসেন কিছুক্ষণ। এরই মাঝে সময় করে খাওয়া দাওয়াও করেন। নামাজও পড়েন। গতকাল রাতে লুবনা কে সপ্নে দেখেছিলেন। মেয়েটা হামাগুড়ি দিচ্ছে আর বাব্বা বাব্বা বলে ডাকছে। বরকত সাহেব স্বপ্নের মধ্যে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন...। “ আমার মা, আমার কোলে আয়...। মারে” বরকত সাহেব লাফ দিয়ে উঠলেন...। বরকত সাহেব এর চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে। বরকত সাহেব আজ রাতে লুবনা কে দেখতে যাবেন। দূর থেকে দেখবেন। তার আরও কিছু প্লেন আছে। তবে আজকে শুধু লুবনা কে দেখেই চলে আসবেন।

বরকত সাহেব আজকে অনেক ব্যেস্ত  । কিছু জিনিস কিনতে হবে। কিছু দড়ি , একটু তেল , ছোটও একটা বাটি । আর কিছু কোলরফরম যোগাড় করলেন, অনেক কষ্টে। তবে কাজ চলবে। একটাই ভয়, বুড়া বয়সে শক্তিতে পেরে উঠবেন কিনা। তারপরও একটা চেষ্টা টাকে করতে হবে।

বরকত সাহেব আজ প্রায়  ১৫ দিন পড়ে বাড়ি ফিরলেন।  অনেকদিন শেভ না করার কারনে দাড়ি একটু বড় হয়ে গিয়েছে। বাড়িতে এসে এ দেখলেন একটা থমথমে অবস্থা। লুবনা বাবা কে দেখেই দৌড়ে এলো...।। “ কোথায় ছিলে তুমি এতদিন বাবা? বাবা, কথা বলও না কেন? “ বরকত সাহেব কিছুটা বিব্রত বোধ করছেন...।। কি বলা যায়? কিই বা বলার আছে? “ মা, হটাত মনে হল কোথাও থেকে ঘুরে আসি, তাই , “ ভেবেছিলাম তোকে বলবও। কিন্তু, মনে হল , তুই যদি বাধা দিস... তাই আর বলি নাই’
হটাত বরকত সাহেব খেয়াল  করলেন লুবনা কাদতে শুরু করেছে। “ কি হয়েছে ড়ে মা, আমি তো চলে আশ্ছি, এখন  কাদতেছিস কেন? বোকা মেয়ে।  “বাবা, লিটু আর পলটু ভাইয়ার চোখ কে যেন নষ্ট করে দিয়েছে। ভাইয়ারা আর দেখতে পাবে না।
বলেই লুবনা হাউমাউ করে  কেঁদে উঠল। বরকত সাহেব  এর মনটাও ভার হয়ে উঠল। চোখের কোনে পানি জমলও।  কাদলেন । তবে , দুষ্ট গরুর চাইতে বিকলাঙ্গ গরু ভাল।
বরকত সাহেব ওই দুটি চোখ  আর কখনো দেখতে চান না, যেই  দুটি চোখ বাবা, বোন এর রাস্তা আঁটকে ছিনতাই করে।

অপরাধি যেই হোক, তার শাস্তি পাওয়া উচিত। আর অবশ্যই সেটা নিজ বাড়ি থেকে শুরু হাওয়া উচিৎ, নয়তো একসময় সব নিয়ন্ত্রণ এর বাহিরে চলে যাবে। charity begins at home
 -ইমরান হোসেন-

No comments:

Post a Comment