Saturday 15 September, 2012

বোকা মেয়ের গল্প


আজ শুনাবো এক বোকা মেয়ের গল্প।আসলে গল্প বললে ভুল হবে।তার মনের কথা জানাবো আজ। যদিও তার মনের কথা জানতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে।কারন একটাই, চিরাচরিত স্বভাব; বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। মেয়েটি খুব একটা হাসতে জানে না কিন্তু কাঁদতে বেশ ভালমতই জানে।কেউ একটু খোঁচা দিয়ে কথা বললো আর অমনি চোখের ট্যাঁপ চালু।পানি ঝরছে তো ঝরছেই।যদিও কেউ জানে না হাসতে ভীষণ ভালোবাসে মেয়েটি।জানবেই বা কেমন করে।কেউ কখনো জিজ্ঞেস করেছে নাকি। বোকা মেয়েটি গাইতেও ভালোবাসে।
কিন্তু ঐ চুপিচুপি পর্যন্তই।কারন কি আর !!!! মেয়েটি যে বোকা। ছোটবেলা থেকেই কালো মেয়ে শুনতে শুনতে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া মেয়েটি এখন আর কেউ নাক সিটকালেও গায়ে লাগায় না। বোকা  মেয়েটিরও রয়েছে কল্পনার এক বিশাল জগত, যেখানে শুধুই তার রাজত্ব।তার এই রাজ্যের যতসব আজগুবি গল্প শোনার সঙ্গী শুধু একজন ই, তার প্রিয় ডায়েরীটি ।অন্য সবার মতো তার জীবনেও এসেছিলো ভালোবাসার মানুষ,যে তাকে স্বপ্ন দেখাতে শিখিয়েছিলো।তার ফ্যাকাসে বর্ণহীন জীবনে একটু একটু করে রঙ লাগিয়েছিলো। খুব সাধারণ এক  মানুষকেই তার জীবনে কাম্য করেছিলো সে।কিন্তু সেই সাধারণ মানুষটিকেই এখন তার কাছে রূপকথার রাজপুত্র বলে মনে হয়।মনে তো হবেই, চাইলেও যে আর তাকে ছুঁতে পায়না।ভুলে গিয়েছিলো বোকা মেয়েটি, রাজপুত্রের সাথে তো আর ঘুঁটেকুড়ানির মিল হয়না।

আজো মনে পরে মেয়েটির তার একুশতম জন্মদিনের কথা। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই।কর্কশ ভাইব্রেশনে মুঠোফোনটা হঠাৎ  করেই কেঁপে ওঠে। রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে থাকা ছেলেটি গিটারের সুরে একমনে গেয়ে ওঠে ,
“রাজকুমারী, দু’ একটা কথা বলি
বারান্দাটা ছেড়ে যেওনা,
ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি
একটুখানি দাঁড়াও না।
আমি যে সারাদিন হয়ে যাই আনমনা
চিৎকার করে বলি ;
হাত দুটি ধরে তোমার
তুমি আমার রাজকন্যা.........”
একছুটে ঘর থেকে বারান্দায় যায় মেয়েটি।রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখতে পায়। সেই মুহূর্তে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে হয় তার।অন্ধকারে মেয়েটির চোখের  কোনে জমে থাকা অশ্রু দেখতে পায়না ছেলেটি............।

“আমাকে নিয়ে কেউ কবিতা লেখে না,
কারো কবিতার ছন্দ হইনা আমি।
কেউ আমাকে নিয়ে তার গিটারে টুং টাং করে না,
কারো গিটারের তারের ঝংকার হইনা আমি।
কেউ আমাকে নিয়ে গান গায়না আর,
কারও গানের সুর হইনা আমি।
তবু আমি কারো অপেক্ষায় থাকি বুকে এক রাশ অভিমান নিয়ে,
স্বপ্ন এখনও দেখে যাই, দীর্ঘশ্বাস ফেলে যাই ।”

এটুকু লিখেই লেখার গতি বন্ধ করে দেয় অথবা।মনে মনে ভাবে যতসব আজগুবি ছ্যাঁকামার্কা কথা লেখা হলো আজ।রাতের পর রাত জাগার কারনেই এরকম হয়েছে ভেবে নিজেই নিজের গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকে।ডায়েরির পাতা কাটাকুটি করবে কিনা ভাবতে ভাবতেই ডায়েরি বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়।এক মগ ধোঁয়া ওঠা কফি তৈরি করে নিয়ে এসে বারান্দার ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় অথবা।ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে তবু ঘুম আসেনা।মেঘে ঢাকা গভীর রাতের আকাশে তারা খুঁজতে থাকে একমনে।কানে হেডফোন তার,মুঠোফোনে বেজে চলেছে-
“আমার রাতজাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ি,
আমি পাইনা ছুঁতে তোমায়
আমার একলা লাগে ভারি.........”

অপেক্ষায় থাকে আরেকটি নতুন ভোরের............

ভোরের আলো সবে ফুটতে শুরু করেছে।কেবলমাত্র একটু তন্দ্রা আসতে শুরু করেছিলো।হঠাত্‍ বৃষ্টির শব্দে সেটাও ভেঙে যায় অথবার।তাকিয়ে দেখে আকাশ ভেঙে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে।এলোমেলো মনটা হঠাত্‍ করেই ভালো হয়ে যায়।এমন পরিবেশে বিশেষ কারো কথা মনে পড়াটাই স্বাভাবিক।সেই বিশেষ কাউকেই ফোন দিয়ে ফেলে সে।যদিও জানে এতো ভোরে সাহবের পাত্তা পাবেনা।একবার দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে কাঙ্খিত ঘুমজড়ানো কন্ঠ শুনতে পায়।

-কি ব্যাপার ! এত্ত সকালে ! ! !
-হুম্ বৃষ্টি হচ্ছে তাই।
-তো ?
-বৃষ্টির রঙ কি বলোতো।
 -জানিনা।
-বৃষ্টি দেখোনা নাকি !
-তোমার মতো অতো সময় নাই আমার।

মেজাজ বিগড়ে গেলো অথবার।খটাশ্ করে লাইন কেটে দিলো ফোনের।কি সুন্দর বারান্দায় দাঁড়িয়ে হাত ভেজাচ্ছিলো বৃষ্টিতে।মনের মধ্যে কতো রোমান্স উঁকিঝুঁকি মারছিলো।আর সব একদম ফাটা বেলুনের মতো চুপসে দিলো আহনাফ নামের গাবদুটা।কোনো রসকস নাই মনে।শেষ কবে ভালো করে কথা বলেছিলো তাও মনে পড়েনা।Always rough n tough টাইপের এই ছেলের সাথে যে কিভাবে থাকে ভাবতেই মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে।বন্ধুরা বলে তোর ধৈর্যও আছে বটে।ফোনটা রেখেও শান্তি পায়না।উসখুস করে আহনাফের সাথে কথা বলার জন্যে।একদম ভালো লাগেনা কথা না বলে।প্রতিদিন ভাবে ফোন দিয়ে সেও আহনাফের মতো দিবে এক ঝারি।কিন্তু প্রতিবার ওর কন্ঠটা শোনার পর কি যেন হয়ে যায়।মন্ত্রমুগ্ধের মতো কান পেতে থাকে।মানুষ এতো সুন্দর করে কথা বলে কিভাবে।ঝারি দিলেও মনে হয় যেন দিক না ঝারি।যদিও আহনাফের ধারণা তাকে নাকি পাত্তাই দেয়না ও।কিছুই বুঝেনা ছেলেটা। আসলেই গাবদু। প্রতিবারের মতো এবারো আমাকেই ফোন দিতে হবে।এই ভেবে ফোনটা হাতে নিতেই স্ক্রীনে আহনাফের নাম ভেসে ওঠে।একটু অবাক হয়েই ফোনটা রিসিভ করে।

ওপাশ থেকে বলে ওঠে,"নিচে নামোতো বাবু"।
নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেনা।একছুটে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়।

আজ আরেক বোকা মেয়ে ভিজবে শহরের এই পিচঢালা রাস্তায় তার ভালোবাসার মানুষটির হাত ধরে. . . .
বৃষ্টিসিক্ত হাতটি ধরতেই ভালোবাসার মানুষ গুনগুনিয়ে ওঠে-
"মনে একটাই সুখআমাকেই খুব ভালোবাসো তুমি তাই,
ভালোবাসি তোমায় এতোটাই. . . ."

(উত্‍সর্গ তোমাক)
(এ গল্পের চরিত্র কাল্পনিক নহে)

No comments:

Post a Comment