Saturday 15 September, 2012

অপূর্ণতাই পূর্ণতা


অংকন আর লগ্ন খুব কাছের কেউ না হলেও একি ক্লাসের। আর সেই থেকেই পরিচয়। অল্পস্বল্প কথার মাঝে দেখতে দেখতেই ওদের SSC পরীক্ষা শেষে রেজাল্ট দিয়ে দেয়। একি স্কুল শেষে দুজনের দেখা আবার একি কলেজে। অল্প কিছুদিনের মাঝেই খুব কাছের বন্ধু হয়ে যায় ওরা। প্রতিদিন দেখা হবে তবু রাতে লম্বা সময় কথা না বললেই যেন নয়! সামনেই ঈদের ছুটি, কিন্তু ল্গনের মাঝে এনিয়ে কোন চিন্তাই নেই, সে বান্ধবীদের সাথে আড্ডা নিয়ে ভিষন ব্য়স্ত। অংকন নিজেই নিজেকে বলে, "কত দিন দেখা হবে না তার ঠিক নেই,আর মেম সাহেবার খবর নেই। একবার সামনে পেয়ে নেই ওর চুল যদি আমি না ছিড়সি!"

আর লগ্ন অংকনের ঘুরাঘুরি দেখে বেচারার অবস্থা টের পায়, কিন্তু ভাবখানা এমন করে যেন লগ্ন ওকে দেখেই নি।শেষে লগ্ন নিযেই অংকনকে ডাক দিয়ে বলে -  কিরে ছেকা খাওয়া যুবক কার পেছনে এত ঘুরঘুর করছিস শুনি!
:দোস্ত নতুন ১টা মেয়েকে দেখলাম,যা সুন্দর না! দেখলে পুরাই টাস্কি খাবি। অংকনের এই কথা শুনে লগ্ন বলে," তো শালা ওই মেয়ের পেছনেই যা,আমার সাথে কথা বলিস কেন!"
তাই তো,তোর সাথে কথা বলব আমি কোন দুঃখে,এতক্ষন থেকে যে কথা বলতে চাইছিলাম তখন তো পাত্তাই দিলা না আর এখন অন্য় কারো কথা বলাতে রাইগা পালাচ্ছিস না। আমার সামনে আসবি না আর কখনো। আই কথা বলেই লগ্ন হন হন করে হেটে চলে যায়্, অংকনের মেজাজ সপ্তম ছেড়ে তখন অষ্টমে। এর মাঝেই মোবাইলের ভাইব্রেটে আরো বিরক্ত হয়ে দেখে লগ্নের টেক্সট।এখনি কফিশপে আয়। আলতো হেসে কফিশপের দিকে চলে যায় অংকন। সেখানে কিছুক্ষন থেকে দুইজন নিজেদের গন্তব্য়ের পথে চলে যায়।
ঈদের ছুটি শেষে আবারো দুইজনের মেলামেশা চলতেই থাকে। এর মাঝে অংকনের সাথে পরিচয় হয় একি কলেজের উষার। উষাকে সময় দিতে গিয়ে লগ্নকে আর আগের মতো সময় দেয়া হয় না অংকনের। কিন্তু যখনি কথা আর দেখা হয় তখনি ঠিক আগের মতো দুষ্টমি লেগেই থাকে। এর মাঝে ধীরে ধীরে অংকন আর উষার ভিতর রিলেশনটা হয়েই যায়। আর বেচারি লগ্ন এর কিছুই জানে না, শেষে ফ্রেন্ডশিপ ডেতে লগ্নকে কথাটা বলে সারপ্রাইজ দিবে বলে ঠিক করে।ওইদিন রাতে অংকন অনেকক্ষন কথা বলে লগ্নকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কথা শেষ করে। লগ্ন ভেবেই পায় না কি সারপ্রাইজ দিবে অংকন! সে ভাবে হয়তো অংকন ওকে ওর প্রিয় কিছু গিফট করবে এই ভেবে আনমনে বলে বসে "পাগল ১টা!"
পরদিন অংকন আর লগ্ন দুইজন একান্ত প্রিয় কফিশপে আসে। উষার আসতে কিছু দেরী হবে। তাই ওরা দুইজনি করছিলো অপেক্ষা, অংকন করছিলো উষার আর লগ্ন করছিলো ওকে কি সারপ্রাইজ দিবে তার প্রিয় বন্ধুটি! ১টা নীরবতা বিরাজ করছে ওদের মাঝে। শেষে লগ্ন নিজে থেকেই বলে,
: কিরে ছাগল,চুপচাপ বসেই থাকবি নাকি কিছু অর্ডার দিবি?
: খাওয়া ছাড়া তো কিছুই চিনলি না জীবনে!
: কি বললি তুই আমাকে! আমি খাওয়া ছাড়া কিছু চিনি না! কখনো বিল পে করসিশ আমার সাথে এসে? কিপ্টা।
: আরে রাগিস কেনরে বাপ! যা আজকেই তোকে ট্রিট দিমু।
: তুই ট্রিট দিবি আমাকে, এই কথা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?
: দিব বলছি তাই এখন পার্ট মারিস না?
: লাগবে না তোর ট্রিট,আমি চললাম।
এর মাঝেই উষা চলে আসে, সরি দেরী করে ফেললাম আমি। উষাকে দেখে লগ্ন অনকেটা বেকুব বনে যায়,
: আরে উষা তুমি এখানে? লগ্ন কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করেই বসে। আলতো ১টা হাসি দিয়ে অংকন নিজেই উষার কাধে হাত রেখে লগ্নের সাথে পরিচয় করে দেয়,
: লগ্ন উষা আমার গার্লফ্রেন্ড। লগ্নর আর বুঝতে তো বাকি র ইলো না সারপ্রাইজটা কি! ঝারি দিয়ে অংকনকে বলে,
: এই ছিলো তোর সারপ্রাইজ! আগে বললে কি হতো না?হারামি,
: সরিরে। কখন যে কি হয়ে গেলো নিজেই বুঝে উঠতে পারিনি, তাই আর তোকে বলার সাহস হয়নি।
 আর এইজন্য় আজ তুই আমাকে ট্রিট দেয়ার কথা বলছিলি! তুই আসলেই ১টা হারামি (লাজুক হাসি দিয়ে)

ওরা বেশ কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে যায়। লগ্ন পেলো নতুন ১টি বন্ধু আর অংকন তো! (সেটা নাহয় নাই বা বললাম)

দেখতে দেখতে ওদের টেস্ট এক্সাম চলে আসে। ভালোই চলছিলো সবকিছু, কিন্তু এর মাঝে লগ্ন আর উষার মাঝে ধরে ফাটল। অংকনকে শুনতে হয় লগ্নকে নিয়ে উষার কথাবার্তা। অংকন বেচারা পরে দোটনায়। কিন্তু লগ্ন কখনোই উষাকে নিয়ে অংকনের কাছে কিছুই বলতো না শুধু এই ভেবে পাছে যদি না প্রিয় বন্ধুটিকে হারাতে হয়, আর অংকনো কখনোই লগ্নকে উষা কি বলেছে তা বলত না। লগ্ন আর অংকনের দেখা করাটা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেলো। উষা আর অংকনের মাঝে রিলেশন ভালোই চলছিলো। আর ওদের HSC পরীক্ষ নাকের ডগায় চলে আসে। অংকন আর উষার মাঝে কথা কিছুটা কমে গেলো, কিন্তু লগ্নকে নিয়ে কথা বলাটা উষার বন্ধ হচ্ছিলোই না। দেখতে দেখতে ওদের এক্সাম শেষ হয়ে যায়। উষা অংকননে শর্ত দেয় লগ্নকে ভুলে যেতে নতুবা ওকে! অংকন কখনোই উষার কাছে এটা আশা করেনি, আর সে এটা বুঝে গিয়েছিলো উষার সাথে ওর সম্পর্কে ফাটল ধরে গেছে। সে সবসময় বিস্বাস করতো,

" ভাঙা কাঁচকে কখনোই আগের অবস্থায় আনা যায় না" তাই কিছু না ভেবেই সে উষার সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে নেয়। কিন্তু মানসিক ভাবে পুরোই ভেঙে যায়। অন্য় সবসময়ের মত লগ্ন এখনো অংকনের সাথে ছায়ার মত সাথেই থাকে। কিছুটা সময় নিয়ে হলেও অংকন কষ্টগুলো থেকে বেরিয়ে আসে। দুইজনি ভর্তি হয়ে যায় আলাদা ভার্সিটিতে। আগের মত দেখা না হলেও প্রতিদিন নিজেদের কথা ঠিকি চালিয়ে যায়।সবকিছুই স্বাভাবিকভাবে চলছে। লগ্ন আর অংকনের মাঝে সময়টা ভালোই চলছে। ওদের ভিতর খুনসুটি লেগেই থাকে আগের মত। অংকনের মাঝে মাঝে উষার জন্য় খারাপ লাগলেও লগ্নর কারণে কখনোই তা বেশিক্ষন থাকে না। অংকন অনেক বেশি ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পরে, হয়তো কিছুটা দূর্বল! কিন্তু এইসব কখনোই খুব ১টা আমলে নেয় না অংকন নিজেও, ভালোই তো আছে লগ্নর ছত্র ছায়ায়।
কিন্তু সবসময় ভালো থাকাটা মনে হয় প্রকৃতিও চায় না।কেন যেন লগ্ন হঠাৎ অংকনকে এভয়েড করা শুরু করে দেয়। ব্য়পারটাতে যেন অংকন খেই হারিয়ে ফেলে, কিছুই যেন সে বুঝে উঠেনা! পাগলপ্রায় হয়ে যায় অংকন। লগ্ন কিছু বলেও না, ফোন করলে রিসিভ করে না, আর রিসিভ করলেও ব্য়স্ততা দেখিয়ে কথা বলে না।এর মাঝে অংকনের সাথে কথা হয় উষার বান্ধবি জাবিনের সাথে। জাবিন সব কিছু খুলে বলে অংকনকে, উষা লগ্নকে নিয়ে এমন কিছু গুজব ছড়িয়েছে যা যেকোন মেয়ের জন্য় খুবি অপমানকর। কথাগুলো শুনার জন্য়ে অংকন মোটেও প্রস্তুত ছিল না, ওর আর কিছুই বুঝার বাকি রইলো না, কেন লগ্ন ওকে এমন ভাবে এভয়েড করছে! সে লগ্নকে ফোন করলেই লগ্ন ওকে বলে বসে, " জীবনে অনেক ভাল বন্ধু পাওয়া যাবে, হয়তো আমার চেয়েও ভালো!"
কথাগুলো বলেই লগ্ন অংকনের সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে নেয়। অংকন এতোটাই স্তব্ধ হয়ে গেল যে কথা বলার শক্তিও সে হারিয়ে ফেলে। তারপর অনেকবার অংকন লগ্নের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে, কিন্তু কখনোই কোন লাভ হয়নি।

(দেড় বছর পর)

অংকন এর মাঝে নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে নেয়। লগ্নর সুকস্ম্ৃতি নিয়ে সে ভালোই আছে তবে এখনো লগ্নকে অনেক মিস করে। হঠাৎ ১দিন লগ্ন দেখা করতে চেয়ে অংকনকে টেক্সট করে। সে অনেক খুশি হলেও বুঝে উঠছিল না কি করবে! শেষে আবার সেই পুরনো কথায় ফিরে আসে,
" ভাঙা কাচ কখনোই জোড়া লাগে না"
 থাক না কিছু অপূর্ণতা, হয়তো এই অপূর্ণতাই তার সবচেয়ে বড় পূর্ণতা।

-JISAN BAPPY-

No comments:

Post a Comment